বিনোদন ডেস্ক : অনুরাগ কাশ্যপের ‘গ্যাংস অব ওয়াসিপুর’ ছবির সুবাদেই দর্শকরা প্রথম তাকে চিনেছিলেন।গ্ল্য়ামারাস নয়, ডার্ক ছবি দিয়ে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন হুমা কুরেশি। হুমার বাবা দিল্লিতে গত ৩০ বছর ধরে নামী কাবাবের দোকান চালান। দিল্লি শহরে ৮৮ টিরও বেশি আউটলেট আছে তাদের। তবে প্রতিষ্ঠিত পারিবারিক ব্য়বসার দিকে কোনরকম আগ্রহ ছিল না তার।
ছোটবেলা থেকেই চেয়েছিলেন সিনেমার নায়িকা হতে। বলিউড তাকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করত। ১৯৮৬ সালে দিল্লিতে জন্ম নেওয়া হুমা, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। এই সময়েই তিনি থিয়েটারের সংস্পর্শে আসেন। অভিনয় জগতে তার মেন্টর ছিলেন এন কে শর্মা। তিনি-ই তাঁকে স্বপ্ন দেখতে শেখান। এই সময় এক বন্ধুর কাছ থেকে হুমা জানতে পারেন মুম্বাইয়ে একটি সিনেমার জন্য অডিশন নেওয়া হচ্ছে। সেখানে অভিনয় করবেন অভয় দেওল।
কিন্তু হুমা জানতেন ছবিতে অভিনয়ের অনুমতি পাবেন না বাড়িতে। তাই মুম্বাই ঘুরতে যাচ্ছেন বলে বন্ধুর সঙ্গে দিল্লি থেকে চলে আসেন। সেই অডিশনে হুমা উত্তীর্ণ হন। কিন্তু শেষ অবধি ছবিটি দিনের আলো দেখেনি। দিল্লিতে ফিরে যাওয়ার পরে হুমা ঠিক করেন, এ বার বাড়িতে অনুমতি নিয়েই সিনেমায় অভিনয় করবেন। দিল্লি ফিরে গিয়ে হুমা বাড়িতে সব কথা খুলে জানান।
বাবা মায়ের অনুমতি আর দু চোখে অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে তিনি চলে আসেন মুম্বাই। পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকতে থাকতেই শুরু হয় স্ট্রাগল। মুম্বাইয়ে কিছু দিন থাকার পরে মডেলিংয়ের অফার পেতে শুরু করেন হুমা। পৃথ্বী থিয়েটার যাতায়াতের সুবাদে তৈরি করেন নিজের নেটওয়ার্ক। অভিষেক বচ্চন, শাহরুখ খান, আমির খানের মতো তারকার সঙ্গে বিজ্ঞাপনী ছবিতে কাজ করার সুযোগ পান নবাগতা হুমা। পঞ্চগনিতে একটি বিজ্ঞাপনী ছবিতে তিনি অভিনয় করছিলেন আমির খানের সঙ্গে।
ছবির পরিচালক ছিলেন অনুরাগ কাশ্যপ। তিনি হুমার কাজে এতটাই মুগ্ধ হন, কথা দেন পরের ছবিতে তিনি হুমাকে কাস্ট করবেন। কথা রেখেছিলেন অনুরাগ। তাঁর পরিচালনায় একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন হুমা। ‘গ্যাংস অব ওয়াসিপুর’-এর দু’টি অংশ এবং ‘লাভ শাব তে চিকেন খুরানা’। শুভাকাঙ্খীদের পরামর্শের বিরুদ্ধে গিয়ে হুমা ডার্ক ছবিতে অভিনয় করে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন।
তিনি যে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা বোঝা গিয়েছিল কিছু বছরের মধ্যেই। প্রথম ছবিতে অসাধারণ অভিনয় তাঁকে বলিষ্ঠ নায়িকা হিসেবে পরিচিতি দেয় ইন্ডাস্ট্রিতে। অনুরাগ কাশ্যপের সঙ্গে কাজের পাশাপাশি শোনা যেতে থাকে তাদের সম্পর্কের গুঞ্জনও। সবাই বলতে থাকে, হুমার ক্যারিয়ার সাজিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরাগ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি উৎসাহী। ২০১৩ সালে যখন অনুরাগ-কল্কির দাম্পত্য ভেঙে যায়, তখন আঙুল উঠেছিল হুমার দিকেই।
বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে অনুরাগ বা কল্কি কেউই কোনদিন কিছু বলেননি। তখন হুমা বলেছিলেন, তার নামে যা-ই রটে থাকুক না কেন, অনুরাগের সঙ্গে তিনি সম্পর্ক নষ্ট করবেন না। ‘ইশকিয়া’ ছবির পরবর্তী অংশ ‘দেড় ইশকিয়া’ ছবিতে পরিচালক অভিষেক চৌবে প্রথমে নিয়েছিলেন কঙ্গনা রানাউতকে। কিন্তু পরে এই ছবি থেকে বাদ পড়েন কঙ্গনা। মাধুরীর পাশে পার্শ্বনায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন হুমা কুরেশি।
ইন্ডাস্ট্রির অন্দরমহলের খবর, সে সময় অভিষেকের সঙ্গেও বিশেষ সম্পর্ক ছিল হুমার। তবে ‘ইশকিয়া’-র মতো এর দ্বিতীয় অংশ ততটা সফল হয়নি। কিন্তু এই ছবিতে মাধুরী দীক্ষিত, নাসিরুদ্দিন শাহের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করায় হুমার ক্যারিয়ার এক লাফে এগিয়ে যায় অনেকটাই। সুনামের মতো বিতর্কও বরাবর হুমার সঙ্গী হয়েছে। মাঝে শোনা গিয়েছিল, তার জন্যই ভাঙতে বসেছে সোহেল খানের উনিশ বছরের দাম্পত্য।
গভীর রাতে হুমার ফ্ল্যাটের কাছে দেখা যেত সোহেলকে। শেষ পর্যন্ত নাকি স্ত্রী সীমার চাপে সোহেল একসময় হুমার সঙ্গে সম্পর্ক থেকে সরে আসেন। সেলেব্রিটি ক্রিকেট লিগে সোহেলের দলের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরও ছিলেন হুমা। পরে তার জায়গায় দেখা যায় কৃতী শ্যাননকে। তবে সোহেল বা হুমা দু’জনের কেউ তাঁদের সম্পর্কের কথা স্বীকার করেননি। হুমা তো একবার বলেন, সোহেল তার ভাইয়ের মতো।
এক সাক্ষাৎকারে হুমা পরে বলেন, তিনি যখন দিল্লি থেকে মুম্বাই এসেছিলেন, নিজেকে এক বছর সময় দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, তার মধ্য়ে কিছু করতে না পারলে বাড়িতে ফিরে যাবেন। ফেরা তো দূর, হুমা এখন দেশের ব্যস্ততম নায়িকাদের মধ্যে অন্যতম। নিজের ছোট ভাইকেও বলিউডে এনেছেন। বড় ব্যানারের কোনও ছবিতে হুমা অভিনয় করেননি ঠিকই কিন্তু যে যে ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন, আলাদা ছাপ ফেলে গিয়েছেন।
বলিউডের সীমা পেরিয়ে তিনি কাজ করেছেন হলিউডেও। হুমার জীবনে এখন বিশেষ পুরুষ পরিচালক মুদস্সর আজিজ। ‘হ্যাপি ভাগ যায়েগি’, ‘পতি পত্নী অউর ওহ’ ছবির পরিচালক আজিজের সঙ্গে সম্পর্কের কথা নিজেই স্বীকার করেছেন হুমা। বড় ব্যানারে সুযোগ না পেলেও অভিনয় প্রতিভার জোরে ছোট ব্যানারে কাজ করেও যে বড় নাম হয়ে ওঠা যায়, তাই দেখিয়ে দিয়েছেন হুমা।