শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের ১৯তম শাহাদাত বার্ষিকী পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভাওয়াল বীর প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা, স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপি’র ১৯তম শাহাদৎ বার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে। রবিবার (৭ মে) সকালে তার নিজ বাড়ি হায়দরাবাদ গ্রামে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের কবরে পরিবারের পক্ষ থেকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় পবিত্র কোরআনখানি, কালো ব্যাচ ধারণ, স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

 

সকাল ১১টায় শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের কবরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল এমপি ও যুব ক্রীড়া সচিব ড. মহীউদ্দীন আহমেদ । এ সময় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিভিন্ন দপ্তর সংশ্লিষ্ট প্রধানগন উপস্থিত ছিলেন। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মহাপরিচালক আজহারুল ইসলাম খান।

 

আয়োাজিত স্মরণসভায় বক্তব্য প্রদান করেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, মির্জা আজম, সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য শামসুন্নাহার ভূঁইয়া, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমতউল্লাহ খান, সাধারন সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল, গাজীপুর জজ কোর্টের স্পেশাল পিপি এভোকেট শাহজাহান, টঙ্গী প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এ হায়দার সরকার ও সাধারন সম্পাদক কালিমুল্লাহ ইকবালসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

 

অনুষ্ঠানের সভাপতি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, গাজীপুরের মা মাটি মানুষের অত্যন্ত প্রিয় নেতা ছিলেন আমার পিতা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপি। তিনি ছিলেন শোষিত বঞ্চিত নিপীড়িত মানুষের একান্ত স্বজন। শ্রমজীবী মেহনতী মানুষের শেষ ঠিকানা। অথচ বিএনপি জামাত এর খুনীরা প্রকাশ্য দিবালোকে ব্রাশফায়ার করে আমার পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

 

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, আমি আশা করি অবিলম্বে এ পাশবিক হত্যার বিচার হবে। আপিল বিভাগ থেকে দ্রুত আপিল নিস্পত্তি হয়ে এই অমানবিক হত্যাকান্ডের রায় কার্যকর হবে। এই হত্যার পেছনে যারা মূল কুশীলব ছিলো সেই সকল মাস্টারমাইন্ডদের খুজে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্তা করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার, শাহ এ এম এস কিবরিয়া, শহীদ মমতাজউদ্দিনসহ যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, শাহাদাত বরণ করেছেন তাদের এই বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের বিচার যদি আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে করতে পারি তবে বিএনপি জামাত যারা সব সময় খুনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে তারা রাজনৈতিক হত্যাকান্ড সংঘটিত করার সাহস দেখাবে না।

 

শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের বড় ছেলে ও শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্মৃতি পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি তার পিতার ১৯তম শাহাদৎ বার্ষিকীতে তার পিতা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের জন্য দোয়া করার জন্য দেশবাসীর কাছে অনুরোধ জানান।

 

মামলার বাদী মরহুমের ছোট ভাই গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মতিউর রহমান মতি বলেন, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলা বর্তমানে সুপ্রিম কোটের আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে। বিচারকার্য দ্রুত সমাপ্ত করে রায় কার্যকর এবং দেশের বাইরে পলাতক আসামিকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি করেন। যারা জেল-হাজতে রয়েছেন তাদের রায় অবিলেম্বে কার্য়কর করা না হলে তারা আবার নতুন করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে আমাদের বড় ধরনের ক্ষতি করার সম্ভবনা রয়েছে।

 

উল্লেখ্য, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার গাজীপুর-২ (গাজীপুর সদর-টঙ্গী) আসন থেকে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে দুইবার সংসদ সদস্য, ১৯৯০ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৩ ও ১৯৮৭ সালে দু’দফা পূবাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য, শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

 

আহসান উল্লাহ মাস্টার শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ও সাধারণ সস্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০০৪ সালের ৭মে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মদদপুষ্ট একদল সন্ত্রাসী টঙ্গী’র নোয়াগাঁও এমএ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বেচ্ছাসেবকলীগের একটি কর্মীসভায় প্রকাশ্যে দিবালোকে আহসান উল্লাহ মাস্টারকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। পরে ২০০৫ সালের ১৬ মে এই মামলার রায়ে ২২ জনের ফাঁসি ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়।

 

২০১৬ সালের ১৫ জুন হাইকোর্ট ডিভিশন আসামিদের ডেথ রেফারেন্স, জেল আপিল ও আবেদনের শুনানি শেষে ৬ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল এবং ৮ জনের যাবজ্জীবন বহাল রেখে ১১ জনকে খালাস দেয়। বিচার চলাকালে দুইজন আসামি মারা যাওয়ায় তাদের আপিল নিষ্পত্তি করে দেয়া হয়। যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত একজন পলাতক আসামির আপিল না থাকায় তার ব্যাপারে আদালত পূর্বের রায় বহাল রাখে।

Related Post:
আহসান উল্লাহ মাস্টারের মতো ত্যাগী নেতৃত্ব নতুন প্রজন্মকে আলোর পথ দেখাবে : রাষ্ট্রপতি