টঙ্গী প্রতিনিধি: ধর্ষণ ও প্রতারণার অভিযোগে এম আর নাসির ও আজিজুল হক নামের দুই নারী লোভী প্রতারকের বিরুদ্ধে গাজীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা হয়েছে। মামলার নং-১২৫/২০২৩। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
ধর্ষিতা মামলার বিবরনীতে উল্লেখ করেন, স্বামী যৌতুকের জন্য অত্যাচার ও নির্যাতন করত। স্বামীর বিরুদ্ধে টঙ্গী থানায় অভিযোগ দিতে গেলে থানা গেটে আসামী এম.আর নাসির ও আজিজুল হকের সাথে দেখা হয়। তারা জিজ্ঞেস করলে তাদেরকে আমার পারিবারিক সমস্যার কথা বলি। তখন তারা নিজেদেরকে সাংবাদিক পরিচয় দেয় এবং আমাকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেয়। এই সুবাদে থানায় আসা যাওয়ার পথে নাসির এর সাথে আমার দেখা হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় টাকার লোভসহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখায় এবং তার সাথে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। এভাবে নাসির আমাকে প্রায় সময় বিরক্ত করত ও আমার পিছনে লেগে থাকত। এক পর্যায়ে বিবাহের প্রস্তাব দিলে আমি রাজী হই।
আসামী নাসির আমাকে তার ছোট বোনকে দেখানোর কথা বলে মুন্সীগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরে বোনের বাড়িতে নিয়া যায়। সেখানে তার মা এবং বোনকে আমাকে বিবাহিত স্ত্রী বলে পরিচয় দেয়। আমি নাসিরের স্ত্রী না এটা তার বোন ও বোনের স্বামীকে জানাতে চাইলে নাসির আমাকে বারণ করে বলে তার সমস্যা হবে। তার বোন ও বোনের স্বামী তাকে খারাপ ভাববে এবং মান সম্মান নষ্ট হয়ে যাবে।
আমাকে আশ্বাস দেয় টঙ্গী গিয়ে বিবাহের কাজ সম্পন্ন করবো। এসময় আমি তার (নাসিরে) অনুরোধে তখন কিছুই বলিনি। এসুযোগে নাসির আমাকে তার বোনের বাড়িতেই শারীরিক ভাবে ব্যবহার (ধষর্ণ) করে। মুন্সীগঞ্জ থেকে টঙ্গী এসে নাসির কে বিবাহের কাবিন রেজিষ্ট্রেশন করার কথা বললে দ্রুত কাবিন রেজিষ্ট্রেশন করার আশ্বাস দেয়। এভাবে কিছুদিন যায়। পরে তাকে বিয়ের বিষয়ে বললে আজ না কাল বলে তালবাহানা করতে থাকে।
এক পর্যায়ে চাপ সৃষ্টি করলে সে তার সহযোগী আজিজুল হক ও অপরিচিত অন্য এক ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন ৪৮নং ওয়ার্ড হিমার দিঘী এলাকায় কাজী অফিসে নিয়ে যায়। কাজী অফিসে গিয়ে কিছুক্ষণ লেখালেখি করে বের হয়ে যায়। কাবিনে কি লিখা হয়েছে জানতে চাইলে তার সহযোগী আজিজুল হক সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বলে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে।
আমি তাদের কথা বিশ্বাস করে নাসিরের সাথে ঘর সংসার করতে থাকি। নাসির সপ্তাহে তিন দিন বাসায় আসত না। আমি বাসায় না আসার কারন জিজ্ঞাসা করিলে নাসির বলত সাংবাদিকতা কাজের জন্য ঢাকার বাইরে যেতে হয়, তাই নিয়মিত আসতে পারব না। নাসির জানে আমার সাথে তার আইনগত বিবাহ হয় নাই। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি। সরল বিশ্বাসে নাছিরের সাথে স্বামী স্ত্রী হিসাবে ঘর সংসার করে আসছি। কারণ আমি লেখাপড়া জানিনা, তারা যা বলেছে তা-ই বিশ্বাস করেছি।
গত দুই মাস পূর্বে নাসিরের স্ত্রী পরিচয়ে লোকজন নিয়ে বোর্ড বাজার এলাকায় আমার ভাড়া বাসায় হামলা চালায়। একপর্যায়ে নাসির আমি তার বিবাহিতা স্ত্রী তা অস্বীকার করে। বিষয়টি আমার সন্দেহ হলে কাজী অফিসে গিয়ে কাবিননামা দেখতে পাই নাসির আমাকে বিয়ে করে নাই। এতে আমি হতাশ হয়ে ভেঙ্গে পড়ি। পরে আজিজ ও নাসিরের কাছে জানতে চাই আমার সাথে এতবড় প্রতারনার কারন কি!
এসময় নাসির বড় মাপের সাংবাদিক, আজিজ নায়াদিগন্তের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এই বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করার হুমকি দেয়। এমনকি নাসির বলে তুই কোথাও আমার বিরুদ্ধে কিছু বলবি না। কারো কাছে বলে কিছুই করতে পারবি না। আমার পত্রিকা অফিস ও সাংবাদিকরা আমাকে সহযোগিতা করবে। তোকে কেউ সহযোগীতা করবে না।
আরো পড়ুনঃ টঙ্গীতে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে চিকিৎসক গ্রেপ্তার
পুলিশ প্রশাসন, এমপি, মন্ত্রী কেহ-ই কিছু করতে পারবে না। তখন আমি বুঝতে পারি নাসির ও তার সহযোগী আবদুল আজিজ তারা দু’জন যোগ-সাজস করে একে অপরের সহযোগীতায় বিবাহের কাবিননামা করার মিথ্যা ঘটনা সাজিয়েছে। বিবাহের কথা বলে নাছির দিনের পর দিন আমাকে ধর্ষণ করেছে।
উক্ত ধর্ষণ কাজে শেখ আজিজুল হক ও নাসির কে সার্বিক সহযোগীতা করেছে। পরে আমি বিষয়টি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও সাংবাদিকদের জানাই। আমি গার্মেন্টস কর্মী গরিব অসহায়, অভিভাবক না থাকায় আমাকে কেউ সহযোগিতা করছে না। কোন উপায়ন্তর না পেয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি শাহ আলম স্যারের শরনাপন্ন হই এবং তিনি কোর্টে মামলা করতে বলেন। আমি নারী ও শিশু নির্যাতন আদালত গাজীপুর-এ মামলা দায়ের করি। যার নং- ১২৫/২৩।
মামলা করায় আসামী নাসির হুমকি দিয়ে বাদীকে বলে, আমি বড় মাপের সাংবাদিক তুই কেন তোর কোন বাপ ও আমাকে মামলা দিয়ে কিছুই করতে পারবি না। নাসিরের অপর সহযোগী আজিজ তার অপকর্ম ডাকার জন্য বিভিন্ন লোক দিয়ে আমার কথা রেকর্ড করে ফেসবুকে ছেড়ে দেয়।
এ বিষয়ে মামলার বাদী জানায়, আমি একজন অসহায় অভিভাবকহীন। লেখাপড়াও জানি না। আমি একজন গার্মেন্টস কর্মী। আমার এই সরলতার সুযোগ নিয়ে নাসির ও তার সহযোগী আজিজুল হক আমার সাথে প্রতারণা করেছে। এছাড়াও নাসির তার গ্রামের বাড়ীসহ বিভিন্ন জায়গায় একাধীক নারীর সাথে প্রতারণা করেছে। এসব শুনে আমি গাজীপুর বোর্ড বাজার এলাকায় গাছা প্রেসক্লাবের সামনে বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করি। পরে কে বা কারা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এতে আমি প্রাণে বেঁচে যাই।
তারা সাংবাদিক পরিচয়ে আমার সাথে প্রতারনা করেছে। আমি তাদের বিচার চেয়ে অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। কারো কাছে ন্যায় বিচার পাইনি। উল্টো আমাকে নাসির ও আজিজ হুমকি দিচ্ছে। তারা বড় মাপের সাংবাদিক। তাদেরকে এমপি, মন্ত্রী, পুলিশ প্রশাসনসহ কেউ কিছু করতে পারবে না। ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। প্রতারক নাছির ও তার সহযোগী আজিজুল হকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।